পর্ব ৫- রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকালের পর তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। আবু বকর বলেছিলেন যে, রাসুল (সাঃ) নাকি তাকে বলেছিলেন, “আমরা অর্থাৎ নবীদের কোন উত্তরাধিকারী নেই এবং আমরা যা কিছু রেখে যাই সবই জাকাত হয়ে যায়”।এ বিষয়ে অন্য কেউ কোন কিছুই জ্ঞাত ছিলেন না (সয়ুতী,পৃঃ৭৩;হায়তামী,পৃঃ১৯১)।
কোন বিচার বুদ্বিসম্পন্ন মানুষ একথা বিশ্বাস করতে পারে না যে, যারা রাসুলের ওয়ারিশ ছিলেন তাদের কাউকে কিছু না বলে ৩য় ব্যক্তির নিকট বলে গেছেন যে তাঁর কোন উত্তরাধিকারী নেই এবং সবচাইতে বিস্ময়কর হলো এ গুরুত্বপুর্ন বিষয়টি সম্বন্ধ্বে সাহাবাগন অবহিত ছিলেন না। আর এটা তখনই প্রকাশ করা হলো যখন ফাতিমা ফদক ফেরত দেয়ার জন্য দাবী করলেন যা আর কারো জানা ছিল না। কিভাবে এ হাদিসটি গ্রহনীয় হতে পারে? যদি একথা বলা হয় যে, আবুবকরের মহৎ মর্যাদার কারনে এ -হাদিসটি নির্ভরযোগ্য তাহলে ফাতিমার সত্যবাদিতা, সততা ও মহৎ মরযাদার কারনে কেন রাসুলের দান সংক্রান্ত তাঁর দাবী গ্রহন করা হলো না?তাছাড়া আমিরুল মু’মিনিন ও উম্মে আয়মনের সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। যদি ফাতিমার দাবীর জন্য আরো সাক্ষীর প্রয়োজনীয়তা থেকে থাকে তা হলো এ হাদিসটি প্রমানের জন্য অবশ্যই সাক্ষীর দরকার রয়েছে।কারন এ হাদিসটি উত্তরাধীকার সংক্রান্ত কোরানের নির্দেশের পরিপন্থী।নবীদের উত্তরাধিকার সম্বন্ধ্বে কোরানে বর্নিত হয়েছেঃ
“এবং সোলায়মান ছিল দাউদের উত্তরাধিকারী”(২৭ঃ১৬)। “সুতরাং তোমরা নিজের থেকে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দাও যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকুবের পরিবারের উত্তরাধীকারী হবে-বললেন জাকারিয়া” (১৯ঃ৫-৬)।
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে ভৌত সম্পদের উত্তরাধিকারীকেই বুঝানো হয়েছে।কেউ কেউ মনে করেন এমন আয়াত মানুষের নবুয়তের জ্ঞানের উত্তরাধিকারীকে বুঝানো হয়েছে। এটা একটা অসাড় যুক্তি এবং বাস্তব বিবর্জিত কথা।কারন নবীদের জ্ঞান উত্তরাধিকারের বস্তু হতে পারে না এবং এটা উত্তরাধিকারের মাধ্যমে হস্তান্তর যোগ্য নয়। এমনটি হলে সকল নবীর বংশধর নবী হতেন।সেক্ষেত্রে কোন কোন নবীর পুত্র নবী হয়েছিলেন এবং অন্যরা এটা থেকে বঞ্চিত হয়েছে-এরুপ ব্যবধানের কোন অর্থ হয় না। নুরুদ্দিন ইবনে ইব্রাহিম হালাবী ( ৯৭৫/১৬-৫৬৭-১০৪৪/১৬৩৫) তাঁর গ্রন্থে শামসুদ্দিন ইউসুফ হানাফীর(৫৮১/১১৮৫-৬৫৪/১২৫৬) উদ্বৃতি দিয়ে বর্ননা করেছেনঃ
আবুবকর একদিন মিম্বরে বসা ছিলেন। এমন সময় ফাতিমা তার কাছে এসে বললেন, “হে আবুবকর, কোরান আপনার কন্যাকে আপনার উত্তরাধীকারী করেছে অথচ আপনি আমাকে আমার পিতার উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত করেছেন”। একথা শোনা মাত্রই আবুবকর কাঁদতে কাঁদতে মিম্বর হতে নেমে পড়লেন। তারপর তিনি ফাতিমার অনুকুলে ফদক লিখে দিলেন। এসময় উমর সেখানে উপস্থিত হয়ে ওটা কি জানতে চাইলেন। প্রত্যুত্তরে আবুবকর বললেন, “এটা একটা দলিল যাতে আমি লিখে দিয়েছি যে, ফাতিমা তাঁর পিতার উত্তরাধিকারিনী।“ উমর বললো, “তুমি দেখছো আরবগন তোমার বিরুদ্বে যুদ্ব ঘোষনা করতে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে এ দলিল দিলে মুসলমানদের জন্য কোথা থকে তুমি ব্যয় করবে”। তারপর উমর ফাতিমার হাত থেকে দলিলখানা নিয়ে ছিড়ে ফেললেন (শাফী,৩য় খন্ড,পৃঃ৩৬১-৩৬২)।
একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় আবুবকরের হাদিসটি জাল ও তার নিজের বানোয়াট এবং ফাতিমাকে ফদক ও রাসুলের (সাঃ) অন্যান্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্যই এই হাদিস রাসুলের (সাঃ) নাম দিয়ে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ফাতিমা এসব তালবাহানার জন্য আবুবকর ও উমরের উপর তাঁর রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে অছিয়ত করে দিলেন যে, এই ২ জন যেন তাঁর জানাযায় অংশ গ্রহন না করে। আয়শা বর্ননা করেছেনঃ...চলবে…
নিবেদক- মোহাম্মদ হোসাইন, সদস্য সচিব বাংলাদেশ ইমামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা।